ঐতিহ্যবাহী খাবার কাজীর ভাত গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে ভিন্ন স্বাদের মজার এ খাবারটি। এক সময়ে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরেই একটি নির্দিষ্ট সময় ঘটা করে আয়োজন করা হতো 'কাজীর ভাতের'।
ঐতিহ্যবাহী খাবার কাজীর ভাত
গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে ভিন্ন স্বাদের মজার এ খাবারটি। এক সময়ে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরেই একটি নির্দিষ্ট সময় ঘটা করে আয়োজন করা হতো 'কাজীর ভাতের'।
কাজীর ভাত রান্না উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের মিলনমেলা হতো। কাজীর ভাত রান্নাকে ঘিরে সকালটা থাকতো উৎসব মুখোর। তবে শহুরে সংস্কৃতির প্রভাবে দিন দিন গ্রামের এ সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, কাজীর ভাত সাধারণত বছরের চৈত্র মাসে গ্রামের প্রায় ঘরেই রান্না করা হয়। এছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে রান্না করা হলেও গরমে এ ভাতের আয়োজনটা বেশি হয়ে থাকে। কাজীর ভাতের প্রধান এবং অন্যতম আকর্ষণ হলো নানা রকম ভর্তার সমাহার এবং ইলিশ, পুঁটি মাছ, চাপিলা বা বাটা মাছ কড়া করে ভাজা।
দেখতে সাধারণ ভাতের মতো হলেও কাজীর ভাত এক বিশেষ পদ্ধতিতে রান্না করা হয়। এর স্বাদ ও গন্ধও আলাদা। এ ভাত রান্না করতে হলে আধা সেদ্ধ চাল কমপক্ষে সাতদিন মাটির হাঁড়িতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। সাতদিনের একদিন আগে রান্না করলেও এর প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না। অনেকে আট/নয়দিন পানিতে ভিজিয়ে রেখেও এ ভাত রান্না করে থাকে। সে ক্ষেত্রে টক গন্ধ বেশ তীব্র হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতিদিন সাধারণ ভাত রান্নার সময় কিছুটা জ্বাল হওয়ার পর কিছুটা পানিসহ একটু চাল মাটির চুলার পাশেই রাখা হাঁড়িতে তুলে রাখা হয়। এভাবে অন্তত সাতদিন রাখার পর জমানো পানিসহ চাল থেকে এক ধরনের টক গন্ধ বের হলেই তা কাজীর ভাত রান্নার উপযোগী হয়। রান্নার সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখা চাল ভালো করে ধুয়ে সাধারণ রান্নার মতোই ভাত রান্না করা হয়। ভাত হয়ে এলে টক গন্ধ বের হয়। অনেকে আবার ভুনা খিচুরির মতো করেও রান্না করে থাকে। তবে সাদা ভাতের মতোই বেশির ভাগ রান্না হয়ে থাকে।
অতীতে কাজীর ভাতের জন্য চাল ভিজিয়ে রাখার জন্য শুধুমাত্র নতুন বা পুরনো মাটির হাঁড়ি ব্যবহার করার রেওয়াজ থাকলেও বর্তমানে যে কোনো পাত্রেই চাল ভিজিয়ে রাখা হয়। কাজীর ভাতের সঙ্গে আয়োজন করা হয় নানান পদের ভর্তার। মূলত এ ভর্তাই কাজীর ভাতের প্রধান আকর্ষণ।